You are currently viewing ঠান্ডা চা ও কফি: শরীরের জন্য ক্ষতিকর কেন? জানুন অজানা বিপদ
ঠান্ডা চা ও কফি: শরীরের জন্য ক্ষতিকর কেন? জানুন অজানা বিপদ

ঠান্ডা চা ও কফি: শরীরের জন্য ক্ষতিকর কেন? জানুন অজানা বিপদ

আজকাল আমরা অনেকেই এক কাপ চা বা কফি হাতে নিয়ে কাজ করতে ব্যস্ত থাকি। একদিকে আমাদের কাজ চলতে থাকে, অন্যদিকে চা বা কফি ঠান্ডা হতে থাকে। কখনও কখনও কাজের মাঝে এতটাই নিমগ্ন হয়ে পড়ি যে, চা বা কফি ঠান্ডা হয়ে গেলেও আমরা তা পান করতে থাকি। কিন্তু ঠান্ডা চা বা কফি শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, সেটা কি জানি? আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জানি।

গরম চা ও কফির স্বাস্থ্য উপকারিতা

চা এবং কফি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময়, যেকোনো পরিস্থিতিতেই আমরা এক কাপ চায়ের বা কফির স্বাদ গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু এই পানীয়গুলোর সবচেয়ে বড় উপকারিতা আমরা পাই যখন তারা গরম থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গরম চায়ের স্বাদ, গন্ধ এবং পুষ্টির উপকারিতা প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। চায়ের মধ্যে থাকা ট্যানিন, ক্যাফেইন এবং অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরকে সুরক্ষিত রাখে এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।

তবে, ৩০ মিনিট পর চায়ের পুষ্টি এবং উপকারিতা কমে যেতে শুরু করে। এক ঘণ্টার মধ্যে, চায়ে থাকা ক্যাফেইন এবং ট্যানিন অক্সিডাইজ হতে শুরু করে, এবং এর ফলে চায়ের স্বাদ, গন্ধ এবং পুষ্টি পরিবর্তিত হতে থাকে। এক ঘণ্টা পর, চা পুরোপুরি তার সঠিক উপকারিতা হারিয়ে ফেলে। যদি দুধ মেশানো চা থাকে, তবে দুধে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক হতে পারে। বিশেষত গরমের সময়ে এটি আরও দ্রুত ঘটে, কারণ দুধ খুব দ্রুত পচে যেতে পারে এবং এতে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

কফি: কতক্ষণ নিরাপদ থাকে?

চায়ের মতো কফিও অনেকের প্রিয় পানীয়। কফির ক্যাফেইন আমাদের শরীরকে সজীব রাখতে সাহায্য করে এবং আমাদের মনোযোগ বাড়ায়। তবে, কফি একে একে টাটকা থাকে মাত্র ১-২ ঘণ্টা। এর পর, কফি অক্সিডাইজ হতে শুরু করে, এবং এর স্বাদ ও গন্ধ একদম পরিবর্তিত হয়ে যায়। দুধ মেশানো কফি মাত্র ৩০-৪৫ মিনিট টাটকা থাকে। তার পর, কফির মধ্যে থাকা দুধ দ্রুত পচে যেতে শুরু করে এবং এতে ব্যাকটেরিয়া জমে যেতে পারে। গরমের সময়ে এটি আরো দ্রুত ঘটে এবং তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

ফ্রিজে চা ও কফি রাখলে কি উপকার হয়?

অনেকে মনে করেন, চা বা কফি যদি ফ্রিজে রাখা যায়, তবে সেগুলো নিরাপদ থাকবে এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মাবে না। তবে, ফ্রিজে রাখার পরেও চায়ের এবং কফির স্বাদ অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যায়। দুধ মিশ্রিত চা বা কফি ফ্রিজে রাখলেও বেশিদিন ভালো থাকে না, কারণ দুধ খুব দ্রুত পচনশীল। ফ্রিজে রাখার পরও যদি অনেক সময় ধরে চা বা কফি রেখে দেন, তবে তার পুষ্টিগত উপকারিতা অনেকটাই কমে যায়।

তবে, গ্রিন টি বা হার্বাল টি কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজে রাখা যেতে পারে, তবে সেটা ৬ ঘণ্টার বেশি নয়। ফ্রিজে রাখার পরও, এসব চায়ের স্বাদ এবং গন্ধ অনেকটাই কমে যাবে, তবে যেহেতু এটি কোনো প্রাণীজাত উপাদান (যেমন দুধ) নেই, তাই এটি কিছুটা নিরাপদ হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়া এবং পচন: দুধ চা ও কফি সম্পর্কে সাবধান!

চায়ে বা কফিতে দুধ মেশালে সেটা অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। দুধ পানীয়গুলো তাজা না থাকলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে এবং এটি শরীরের জন্য মারাত্মক হতে পারে। যেমন, দুধে থাকা ল্যাকটোজ পচে গ্যাস ও অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান সৃষ্টি করতে পারে, যা পেটের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি এবং এমনকি ফুড পয়জনিংয়ের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষত গরমের সময় এসব পানীয় দ্রুত নষ্ট হতে পারে। যেহেতু দুধের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া দ্রুত গুণগত পরিবর্তন ঘটায়, তাই গরম দুধ চা বা কফি বেশি সময় রাখা কখনই স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

বাসি চা-কফি এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা

বাসি চা বা কফি খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, অ্যাসিডিটির মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত, যারা নিয়মিত বাসি চা বা কফি পান করেন, তাদের মধ্যে অ্যাসিডিটি এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এর কারণ, চায়ের বা কফির মধ্যে থাকা অক্সিডাইজড উপাদানগুলো পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন করে এবং আমাদের হজম ব্যবস্থাকে অস্বাভাবিক করে তোলে।

অতিথিদের জন্য প্রস্তুতি: গরম চা ও কফির আদর্শ পরিবেশন

এক কাপ গরম চা বা কফি কখনই বেশি সময় ধরে ফেলে রাখা উচিত নয়। অতিথি এলেও, যদি চা বা কফি পরিবেশন করতে হয়, তবে তাদের তাজা গরম রাখা সবচেয়ে ভাল। এর স্বাদ, গন্ধ এবং উপকারিতা ভালো থাকবে এবং অতিথিরাও এর সর্বোচ্চ উপকারিতা উপভোগ করতে পারবেন।

শেষ কথা: গরম চা-কফি পান করুন, সুস্থ থাকুন

শেষে, এটাই বলবো যে, চা বা কফি যখন তাজা ও গরম থাকে, তখন তার পুষ্টি এবং স্বাদ সবচেয়ে বেশি উপকারি। ঠান্ডা চা বা কফি পান করলে এর উপকারিতা এবং স্বাদ অনেকটাই কমে যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সুতরাং, চা বা কফি খাওয়ার পর, তার স্বাদ এবং পুষ্টি সঠিকভাবে উপভোগ করতে চাইলে তাজা এবং গরম অবস্থায় তা পান করুন।

“শুভস্য শীঘ্রম” – চা বা কফি পান করার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। গরম অবস্থায় চা বা কফি পান করুন, এবং আপনার স্বাস্থ্য বজায় রাখুন। এতে করে আপনি চায়ের প্রকৃত স্বাদ এবং উপকারিতা উপভোগ করতে পারবেন এবং শরীরও সুস্থ থাকবে।